আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতদের নিয়ে দেশজুড়ে একধরনের অস্থীরতা চলছে।। বিশেষ করে টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর একরাম নিহত হওয়ার ঘটনার অডিও টেপ ফাঁস হওয়ার পর কিছুটা হলেও চাপের মধ্যে পড়ে গেছে ক্ষমতাসীন দল। এ ধরনের পরিস্থিতিতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে তৎপর হয়ে ওঠে বিরোধী শিবির। কিন্তু বিএনপি ওই পথে হাঁটলো না। উল্টো বরং একটা ইস্যু যখন দেশ কাঁপাচ্ছে, এমন মুহূর্তে পূর্বঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করেই ব্যাংককে গেলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার (০৩ জুন) বেলা ১১টা ০৫ মিনিটে স্ত্রী রাহাত আরা বেগমকে নিয়ে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তিনি। ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অথচ আগের দিন শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমণ্ডির ফখরুদ্দিন কনভেনশন সেন্টারে জাতীয়তাবাদী প্রাক্তন ছাত্রকল্যাণ পরিষদ রংপুর মেডিকেল কলেজ শাখার আয়োজনে ইফতার মাহফিলে তিনি অংশ নেন। ওই সময় তার ব্যাংকক যাত্রার বিষয়ে জানতো না কেউ, বিএনপি মহাসচিবও এ বিষয়ে মুখ খুলে বলেননি কিছুই। হঠাৎ করে মির্জা ফখরুলের ব্যাংকক যাওয়া নিয়ে ধোয়াশা তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। শোনা যাচ্ছে পরস্পর বিরোধী দুরকম কথাবার্তা।
বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর তার মুক্তির আন্দোলন এবং আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বড়ধরনের মতবিরোধ দেখা দেয় । বিষয়টি নিয়ে গত দুই মাস ধরে চলছে বিতর্ক। তবে বিষয়টি নাকচ করে দেন মির্জা ফখরুল নিজেই একাধিক সভাসমাবেশে বলেন, ,তারেক ও আমাকে নিয়ে যে খবর বের হয়েছে তা সত্য নয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যানের সাথে কোন প্রকার দ্বন্দ্ব বা মত বিরোধের মতো ঘটনা ঘটেনি । বিএনপি মহাসচিবের এই উক্তিতে বিষয়টি ধামাচাপা পড়লেও আবারও তা চাঙ্গা হয়ে ওঠেছে। এমনও কথা ওঠছে, তারেক রহমানের যুক্তিহীন কিছু সিদ্ধান্তে ক্ষিপ্ত হয়ে বিএনপি ছাড়ছেন মির্জা ফখরুল। একটি গুরুত্ব সময়ে চিকিৎসা নেওয়ার অজুহাতে বিএনপির মহসচিব, ব্যাংকক হয়ে অন্যকোনো দেশে পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
এধরনের গুজবকে উড়িয়ে দিয়ে মির্জা ফখরুলের পরিবার থেকে বলা হয়, ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতেই দেশ ছেড়েছেন বিএনপি মহাসচিব।সেখানকার হৃদ হদরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ভিসুটের অ্যাপয়েন্টমেন্টও নেয়া হয়েছে। ওই হাসপাতালে চিকিৎসা ও রুটিন চেকআপ করার পরপরই তিনি আগামী সপ্তাহেই দেশে ফিরবেন।
চিকিৎসার জন্য মির্জা ফখরুল সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল ব্যাংকক যান। দত মহাসচিবের হৃদরোগ ছাড়াও রয়েছে তার ঘাড়ে ইন্টারনাল ক্যারোটিড আর্টারিতে জটিলতা। এ চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা বাংলাদেশে না থাকায় ২০১৫ সালে ১৪ জুলাই কারাবন্দি ফখরুলকে বিদেশে যেতে জামিন দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এরপর কয়েক দফায় তিনি সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান।
বিএনপি প্রভাবশালী একটি সূত্র জানায়, তারেক রহমানের সঙ্গে বিবাদ বা মতভেদ দূরে থাক, বরং খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে ‘দলের ভারপ্রান্ত চেয়ারম্যান সঙ্গে আলোচনা ও নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণরে জন্যই দেশ ছেড়েছেন মির্জা ফখরুল। ব্যাংককে চিকিৎসার জন্য কয়েকদিন কাটিয়ে বিএনপি মহাসচিব লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হবেন। লন্ডনেই হবে বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার সাক্ষাৎ।
মির্জা ফখরুলের হঠাৎকরে দেশের বাইরে চলে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মিডিয়া উইং শাখার সদস্য শায়রুল কবির খান, এ বিষয়ে কোনো তথ্য তার জানা নেই।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারাও এবিষয়ে কিছু জানাতে অপারগতা জানান।